রাফির স্বপ্ন
“আহা! তুই এতদিকে চোখ দিস কেন? তোর কাজ পড়ালেখা করা।“
এই একটি কথা দিয়ে রাফিকে থামিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন বাবা এ্যাম্বুলেন্সকে
আগে যেতে না দিয়ে তার জায়গা দখল করলে রাফি বলেছিল “কেন করলে এমন?’ বাবার উত্তর ছিল
“সবাই করে, তাড়াতাড়ি যেতে হলে এমন করতে হয়”। কিন্তু রাফি অনেক দুঃখ পেল। সে চায় যেন
রোগীকে আগে যেতে দেয়া হয়। এভাবে তার বুকের মাঝে অনেক কথা চেপে রাখতে হয়। এইমাত্র বাসায়
আসলো সে, সারাদিন কেটে যায় স্কুল আর কোচিং নিয়ে। বাসায় এসে পড়া শুরু করতে হয়। নিজের
জন্য খুব কম সময় পায় সে। বাসায় টিভি আছে কিন্তু ডিসের লাইন নেই; রাফির পড়ালেখার জন্য
সেটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইনটারনেট তো দূরের কথা। অনেকটা আসামির মত অবস্তা তার। লেখাপড়ায়
একসময় ভাল ছিল সে। কিন্তু এই লেখাপড়াই আজ তার জন্য বিষ।নবম শ্রেনিতে উঠার পর তার স্বপ্ন
ছিল ২টি বছর বন্ধুদের সাথে অনেক মজা করবে, দাদার বাড়ি, নানার বাড়ি ঘুরবে, বিভিন্ন যায়গায়
বেড়াতে যাবে। আর পড়ালেখা? সেটি তো ঠিক রাখতেই হবে। কিন্তু কোথায় গেল সেই স্বপ্ন; লেখাপড়ার
দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হল তাকে। তাও শুধু এস এস সি এর সিলেবাস এ সে বদ্ধ। একসময় খেলাধুলা
করত সে, তার বোলিং এ সবাই ছিল মুগ্ধ, কিন্তু ক্লাস এইট এ উঠার পর সব শেষ। শুধু সে একা
নয়, অনেক তাজা প্রাণ আজ তার মত ক্লান্ত। সবাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে
দায়ি করে। কিন্তু এই প্রাণ গুলো জানে, একটু এই ক্লান্ত প্রাণ গুলোকে সতেজ করতে
পারলেই এরা সেরা রেজাল্ট করতে পারবে। আজ অনেক রাফি প্রাণ খুলে বাঁচতে চায়, চায়
একটু নিজের জন্য সময়, চায় একটু খোলা হাওয়া। অনেকে চায় রবীন্দ্র-নজরুলে হারিয়ে
যেতে। পড়ালেখা তো ঠিক রাখতেই হবে, তাই বলে কি জীবন বিসর্জন করব? রাফি পাঠ্যবই হাতে বসে আছে আর ভাবছে কবে স্বপ্ন পূরণ হবে...
লেখকঃ রাফসান জাহিন
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুল এন্ড কলেজ
(লেখাটি বর্তমানের কিছু শিক্ষার্থীর প্রতি তাদের অভিভাবকদের আচরণের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন